উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়,কুলতলি : সুন্দরবনে বিকল্প কর্মসংস্থানের কিছু না পেয়ে মাছ-কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বার বার বাঘের হামলার মুখে পড়ছেন এখান কার মৎস্যজীবীরা। অধিকাংশই সময়েই তাঁরা প্রাণ হারাচ্ছেন। কেউ কেউ ভাল রকম জখম হয়ে ও কপাল জোরে বেঁচে ফিরে আসছেন।আবার অনেকের খোঁজও মিলছে না।আর এই সব অসহায় বাঘে আক্রান্ত পরিবার গুলির পাশে থেকে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে ক্রমাগত আন্দোলন করে চলেছেন গনতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি অরফে এপিডিআর। এপিডিআরের জেলার সহ সম্পাদক তথা জয়নগর শাখা সম্পাদক মিঠুন মন্ডল বলেন, সুন্দরবনের বাঘে আক্রান্ত পরিবারগুলির পাশে দাঁড়াচ্ছে না প্রশাসন। বাঘের হানায় মৃত্যু বা জখম হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনও সরকারি ক্ষতিপূরণ মিলছে না। তাই এর প্রতিবাদে বিক্ষোভে সামিল হতে হলো বাঘে আক্রান্ত পরিবারের সদস্যেদের।এ বছরে এখনো পর্যন্ত সুন্দরবনে বাঘের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের।সরকারি দফতরে ঘুরে ঘুরে এরা কোনো সরকারি সাহায্য পাচছে না।তাই আমাদের দাবি,
সুন্দরবনে জীবন-জীবিকার তাগিদে মৎস্যজীবী ও মৌলেরারা বাঘের আক্রান্ত হন।তাই তাদের সরকারি ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।মাসে ন্যূনতম ১০ হাজার টাকার পারিবারিক পেনশনের ব্যবস্থা করতে হবে।আক্রান্তের পরিবারের সব শিশুদের শিক্ষার সমস্ত দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।পরিবারের এক জনকে সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে।আর এই দাবি নিয়ে এ দিন কুলতলির চিতুরির বন দফতরের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখান আক্রান্ত পরিবারের প্রায় একশো মহিলা। এ দিন বিক্ষোভ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ভুবনেশ্বরীর বাসিন্দা জ্যোৎস্না শী।গত ৩ রা এপ্রিল স্বামী শঙ্করের সঙ্গে জঙ্গলে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন জ্যোৎস্না। শঙ্করের উপরে আক্রমণ করে একটি বাঘ। বাঘের সঙ্গে লড়াই করে মৃত্যুর মুখ থেকে স্বামীকে ফিরিয়ে আনেন জ্যোৎস্না। দীর্ঘদিন চিকিৎসা চলে শঙ্করের। বহু টাকা খরচ হয়। কিন্তু সরকারি তরফে এখনো কিছু তাঁরা পাই নি। গত বছরের ৩১ শে ডিসেম্বর কুলতলির কাঁটামারির অভয় মন্ডল জঙ্গলে মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের কামড়ে মারা যান। স্ত্রী চন্দনা মন্ডল চার শিশু কন্যাকে নিয়ে কিছু মানুষের দয়ায় এক বেলা আধ পেটা খেয়ে জীবন যাপন করছে। সরকারি সাহায্য তাঁরা ও পাই নি। এ দিনের এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন এপিডিআরের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রঞ্জিত শূর। তাঁর কথায়, গত পাঁচ বছরে বাঘে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর নথিভুক্ত সংখ্যাটাই প্রায় ১২৫। জখম ও অনেকে। সরকারি নিয়মেই এঁদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা। কিন্তু অধিকাংশই তা পান না। দেহ না মেলায় অনেক বাঘে আক্রান্তের স্ত্রী বিধবা ভাতাটুকুও পান না। দিনের পর দিন এটা চলে আসছে।এটা কেন হবে।এ ব্যাপারে জেলা মুখ্য বন আধিকারিক মিলন মণ্ডল বলেন, এখন ও পর্যন্ত বৈধ ভাবে জঙ্গলে গিয়ে বাঘের মুখে পড়া প্রত্যেকেরই ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।তবে ওদের ডেপুটেশনের কাগজ পএ খতিয়ে দেখা হবে।
Comentários